ভূমিকা
পদার্থবিজ্ঞানের ভয়কে জয় করতে হলে এর মূল ভিত্তিগুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা আবশ্যক। এই নোটটি কোনো বিস্তারিত লেকচার নয়, বরং মেডিকেল বা ভর্তি পরীক্ষার ঠিক আগে দ্রুত রিভিশন দেওয়ার জন্য একটি কার্যকর সারসংক্ষেপ। এখানে আমি নিউটনিয়ান বলবিদ্যা, ভেক্টর এবং পদার্থের গাঠনিক ধর্মের সেই টপিকগুলোই তুলে ধরেছি, যেগুলো থেকে প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
১. নিউটনিয়ান বলবিদ্যা
এই বিভাগে নিউটনিয়ান বলবিদ্যার মূল ভিত্তি, অর্থাৎ বল, ভরবেগ, এবং ঘূর্ণন গতির অপরিহার্য ধারণাগুলো আলোচনা করা হয়েছে।
১.১ বল এবং এর মৌলিক ধারণা
যে বাহ্যিক কারণ কোনো বস্তুর স্থির বা গতিশীল অবস্থার পরিবর্তন করে বা করতে চায়, তাকে বল বলে। মহাবিশ্বের সকল বল চারটি মৌলিক বলের কোনো না কোনো রূপ।
শিক্ষকের পরামর্শ:
মৌলিক বলের এই ছকটি থেকে প্রতি বছর প্রশ্ন আসে, তাই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মৌলিক বলের তুলনা
| মৌলিক বল | আপেক্ষিক সবলতা | বাহক কণা | গুরুত্বপূর্ণ তথ্য |
|---|---|---|---|
| মহাকর্ষ বল | ১০⁰ (সর্বাপেক্ষা দুর্বল) | গ্রাভিটন | দুটি বস্তুর ভরের কারণে আকর্ষণ |
| দুর্বল নিউক্লিয় বল | ১০²⁵ | W ও Z বোসন | বিটা ক্ষয়ের জন্য এই বল দায়ী |
| তাড়িতচৌম্বক বল | ১০³⁶ | ফোটন | দুটি আহিত কণার মধ্যে ক্রিয়াশীল বল |
| সবল নিউক্লিয় বল | ১০³⁸ (সর্বাপেক্ষা সবল) | গ্লুওন | নিউক্লিয়াসের স্থায়িত্বের জন্য দায়ী |
১.২ বলের ঘাত ও ঘাত বল
অনেক বড় মানের বল খুব অল্প সময়ের জন্য কোনো বস্তুর উপর প্রযুক্ত হলে তাকে ঘাত বল বলে, এবং এই ঘাত বল ও ক্রিয়াকালের গুণফলকে বলের ঘাত বলে।
J = F × t = Δp
শিক্ষকের পরামর্শ:
দেয়াল ও বলের এই সমস্যাটি ভর্তি পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচের সিমুলেশনটি এই ধারণাটি বুঝতে সাহায্য করবে।
১.৩ জড়তার ভ্রামক এবং চক্রগতির ব্যাসার্ধ
জড়তার ভ্রামক (I): ঘূর্ণন অক্ষের সাপেক্ষে কোনো বস্তুর কৌণিক গতির পরিবর্তনকে বাধা দেওয়ার প্রবণতা। I = mr²
চক্রগতির ব্যাসার্ধ (k): ঘূর্ণন অক্ষ থেকে যে দূরত্বে বস্তুর সমস্ত ভর কেন্দ্রীভূত বলে ধরে নিলে এর জড়তার ভ্রামক অপরিবর্তিত থাকে। k = √(I/m)
১.৪ রৈখিক ও কৌণিক গতির সম্পর্ক
রৈখিক ও কৌণিক রাশির মধ্যে সম্পর্কগুলো নিম্নরূপ:
সরণ: s = rθ
বেগ: v = ωr
ত্বরণ: a = rα
২. ভেক্টর
এই অংশে ভেক্টর রাশির অপরিহার্য ধারণা এবং তাদের প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
২.১ ভেক্টর ও স্কেলার রাশি
ভেক্টর রাশি: সরণ, বেগ, ত্বরণ, বল, ভরবেগ, টর্ক।
স্কেলার রাশি: দূরত্ব, দ্রুতি, ভর, কাজ, শক্তি, ক্ষমতা, চাপ।
২.৪ গ্রেডিয়েন্ট, ডাইভার্জেন্স ও কার্ল
শিক্ষকের পরামর্শ:
এই তিনটি ভেক্টর অপারেটরের তত্ত্বীয় ধারণা থেকে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন আসবেই।
গ্রেডিয়েন্ট: একটি স্কেলার ক্ষেত্রকে ভেক্টর ক্ষেত্রে রূপান্তরিত করে।
ডাইভার্জেন্স: একটি ভেক্টর ক্ষেত্রের কোনো বিন্দু থেকে নির্গত বা সেদিকে আগত ফ্লাক্সের পরিমাণ নির্দেশ করে।
কার্ল: একটি ভেক্টর ক্ষেত্রের ঘূর্ণন প্রবণতা পরিমাপ করে।
৩. পদার্থের গাঠনিক ধর্ম
এই অংশে পদার্থের স্থিতিস্থাপকতা, পৃষ্ঠটান এবং সান্দ্রতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হয়েছে।
৩.১ স্থিতিস্থাপকতার মৌলিক ধারণা
পীরণ: একক ক্ষেত্রফলের উপর প্রযুক্ত বল (F/A)।
বিকৃতি: বস্তুর আকার বা আকৃতির আপেক্ষিক পরিবর্তন (l/L)।
ইয়ং এর গুণাঙ্ক (Y): স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে পীরণ ও বিকৃতির অনুপাত।
৩.২ পৃষ্ঠটান
তরল পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল সর্বনিম্ন রাখার প্রবণতাকে পৃষ্ঠটান বলে। এর মূল কারণ হলো তরলের অণুগুলোর মধ্যে ক্রিয়াশীল সংশক্তি বল।
৩.৩ সান্দ্রতা
প্রবাহীর যে ধর্মের জন্য এটি তার বিভিন্ন স্তরের আপেক্ষিক গতিকে বাধা দেয়, তাকে সান্দ্রতা বলে।
৩.৪ স্পর্শ কোণ ও কৈশিকতা
শিক্ষকের পরামর্শ:
স্পর্শ কোণের মান এবং এর উপর ভিত্তি করে তরলের আচরণ সংক্রান্ত এই ছকটি ভর্তি পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
| শর্ত | ফলাফল (ভিজাবে/ভিজাবে না) | কৈশিক ক্রিয়া | পৃষ্ঠের আকৃতি |
|---|---|---|---|
| সূক্ষ্মকোণ (θ < 90°) | ভিজাবে | আরোহণ | অবতল |
| স্থূলকোণ (θ > 90°) | ভিজাবে না | অবনমন | উত্তল |
| সমকোণ (θ = 90°) | কোনটিই নয় | কোনটিই ঘটবে না | সমতল |
উপসংহার
পদার্থবিজ্ঞানের এই মৌলিক ধারণাগুলো হলো আরও গভীর জ্ঞান অর্জনের প্রথম সোপান। এই সারসংক্ষেপটি আপনাকে প্রতিটি বিষয়ের মূল ভিত্তি বুঝতে সাহায্য করবে। বিশেষ করে, মৌলিক বল, বলের ঘাত, এবং স্পর্শ কোণের মতো বিষয়গুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করুন, কারণ এগুলো ভর্তি পরীক্ষার জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময়।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য পদার্থবিজ্ঞান প্রথম পত্রের সাজেশন ক্লাস: বক্তৃতা প্রতিলিপি
১. সূচনা এবং প্রেক্ষাপট
এই বক্তৃতাটি "মেডিফিজিক্স" সিরিজের চূড়ান্ত ক্লাস হিসেবে পরিচালিত হয়েছে, যেখানে শিক্ষক মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য পদার্থবিজ্ঞান প্রথম পত্রের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলোর উপর একটি সাজেশনমূলক আলোচনা উপস্থাপন করেছেন। ক্লাসের শুরুতে, তিনি শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানান এবং এই বিনামূল্যে আয়োজিত সিরিজটির কার্যকারিতা ও শিক্ষার্থীদের সীমিত অংশগ্রহণ নিয়ে তাঁর হতাশা ও মতামত ব্যক্ত করেন।
শিক্ষক তাঁর দীর্ঘ প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে বলেন, "আমি টোটাল ফ্রিতে তোমাদেরকে মেডিফিজিক্সের সবগুলো চ্যাপ্টারই গুছায়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।"
তিনি হতাশা প্রকাশ করেন যে, পেইড ব্যাচে প্রায় ২৭০০-২৮০০ শিক্ষার্থী থাকা সত্ত্বেও এবং বিনামূল্যে মডেল টেস্টের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও, ফ্রি ক্লাসগুলোতে উপস্থিতি এবং মডেল টেস্টে অংশগ্রহণ খুবই কম। এই অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ভবিষ্যতে বিনামূল্যে কার্যক্রম সীমিত করার ইঙ্গিত দেন।
২. অধ্যায় বিশ্লেষণ: নিউটনিয়ান বলবিদ্যা
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য নিউটনিয়ান বলবিদ্যা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যেখান থেকে সাধারণত দুই থেকে তিনটি প্রশ্ন এসে থাকে। শিক্ষক এই অধ্যায়ের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় টপিকগুলো চিহ্নিত করে আলোচনা শুরু করেন।
২.১. গুরুত্বপূর্ণ টপিক: বল সংক্রান্ত আলোচনা
শিক্ষক অত্যন্ত জোর দিয়ে বলেন যে "বল সংক্রান্ত" আলোচনা থেকে প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা শতভাগ। এই অংশ থেকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য তিনি পরামর্শ দেন:
- মৌলিক বলের ছক: চারটি মৌলিক বল (মহাকর্ষ, দুর্বল নিউক্লিয়, তড়িৎ চুম্বকীয় এবং সবল নিউক্লিয়), তাদের একীভূতকরণ তত্ত্ব এবং আপেক্ষিক সবলতার ক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- কণা বিনিময়: কোন মৌলিক বল কোন কণা বিনিময়ের মাধ্যমে কার্যকর হয় (যেমন: তড়িৎ চুম্বকীয় বলের জন্য ফোটন কণা), তা থেকে প্রশ্ন আসে।
- বলের সূত্র, একক ও মাত্রা: বলের মৌলিক সূত্র F = ma, এর একক (নিউটন বা কেজি মিটার/সেকেন্ড²) এবং মাত্রা (MLT⁻²) সম্পর্কিত ধারণা স্পষ্ট রাখতে হবে।
২.২. গুরুত্বপূর্ণ টপিক: বলের ঘাত
বলের ঘাত টপিকটিকেও শিক্ষক ১০০% গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এই অংশ থেকে যেসব ধারণা স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন:
- সূত্র: J = F × t = m(v-u) = Δp
- মূল ধারণা: বলের ঘাত 'ভরবেগের পরিবর্তনের সমান', 'সমানুপাতিক' নয়।
- ঘাত বল: যখন একটি বৃহৎ মানের বল খুব অল্প সময়ের জন্য কোনো বস্তুর উপর ক্রিয়া করে, তখন তাকে ঘাত বল বলে।
- একক ও মাত্রা: বলের ঘাতের একক কেজি মিটার/সেকেন্ড এবং মাত্রা MLT⁻¹।
- গাণিতিক উদাহরণ: একটি ১০ কেজি ভরের বল ২ মিটার/সেকেন্ড বেগে দেয়ালে আঘাত করে বিপরীত দিকে ৩ মিটার/সেকেন্ড বেগে ফিরে আসলে বলের ঘাত হবে: J = m(v - (-u)) = 10 × (3+2) = 50 kg m/s
২.৩. গুরুত্বপূর্ণ টপিক: জড়তার ভ্রামক এবং কৌণিক গতি
| বিষয় | সূত্র | একক | মাত্রা |
|---|---|---|---|
| জড়তার ভ্রামক | I = mr² | কেজি মিটার² | ML² |
| চক্রগতির ব্যাসার্ধ | k = √(I/m) | মিটার | L |
| রৈখিক ও কৌণিক বেগের সম্পর্ক | v = ωr | - | - |
| টর্ক | τ = r × F | জুল | ML²T⁻² |
| কৌণিক ভরবেগ | L = Iω | কেজি মিটার²/সেকেন্ড | ML²T⁻¹ |
বিশেষ সূত্র: পাতলা চাকতি বা নিরেট সিলিন্ডারের জড়তার ভ্রামক I = ½ mr² এবং নিরেট গোলকের জন্য I = ²/₅ mr²।
২.৪. বন্দুকের পশ্চাৎবেগ
বন্দুকের পশ্চাৎবেগ নির্ণয়ের জন্য ভরবেগের সংরক্ষণশীলতার সূত্র ব্যবহৃত হয়। পশ্চাৎবেগের সূত্রটি হলো: V = - (mv/M), যেখানে m ও v হলো গুলির ভর ও বেগ এবং M হলো বন্দুকের ভর।
৩. অধ্যায় বিশ্লেষণ: ভেক্টর
ভেক্টর অধ্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো হলো:
- ভেক্টর ও স্কেলার রাশির উদাহরণ: কোনটি ভেক্টর এবং কোনটি স্কেলার, তার উদাহরণগুলো মনে রাখতে হবে।
- ভেক্টরের সূত্র: যোগের বিনিময়, সংযোগ, এবং বন্টন সূত্র।
- ডট ও ক্রস গুণনের উদাহরণ: কাজ (W = F.r) ডট গুণন এবং টর্ক (τ = r × F) ক্রস গুণনের উদাহরণ।
- গ্রেডিয়েন্ট, ডাইভারজেন্স ও কার্ল: কোন ভেক্টর ফিল্ড সলিনয়েডাল (ডাইভারজেন্স শূন্য) বা অঘূর্ণনশীল (কার্ল শূন্য) হওয়ার শর্ত কী।
৪. অধ্যায় বিশ্লেষণ: পদার্থের গাঠনিক ধর্ম
৪.১. স্থিতিস্থাপকতা সংক্রান্ত ধারণা
| রাশি | সংজ্ঞা | একক ও মাত্রা | মন্তব্য |
|---|---|---|---|
| বিকৃতি | বস্তুর একক মাত্রার পরিবর্তন। | একক ও মাত্রা নেই। | এটি একটি অনুপাত মাত্র। |
| পীড়ন | বস্তুর একক ক্ষেত্রফলে প্রযুক্ত বল। | প্যাসকেল (Pa); মাত্রা: ML⁻¹T⁻² | এর একক ও মাত্রা ইয়ং-এর গুণাঙ্কের অনুরূপ। |
| ইয়ং-এর গুণাঙ্ক | পীড়ন ও বিকৃতির অনুপাত। | প্যাসকেল (Pa); মাত্রা: ML⁻¹T⁻² | তাপমাত্রা বাড়লে ইস্পাতের ইয়ং-এর গুণাঙ্ক কমে। |
| পয়সনের অনুপাত | পার্শ্ব বিকৃতি ও দৈর্ঘ্য বিকৃতির অনুপাত। | একক ও মাত্রা নেই। | এর তাত্ত্বিক সীমা -১ থেকে ০.৫ পর্যন্ত। |
৪.২. পৃষ্ঠটান এবং স্পর্শ কোণ
পৃষ্ঠটানের মূল ধারণা: তাপমাত্রা কমলে বা অজৈব পদার্থ মেশালে পৃষ্ঠটান বাড়ে। এর একক নিউটন/মিটার (N/m) এবং মাত্রা MT⁻²।
স্পর্শ কোণের গুরুত্ব: কাঁচ ও পারদের স্পর্শ কোণ প্রায় ১৪০° (স্থূলকোণ)। স্থূলকোণের ফলে তরল কঠিনকে ভেজায় না। সূক্ষ্মকোণের ফলে তরল কঠিনকে ভিজিয়ে দেয়।
৪.৩. সান্দ্রতা
তরলের ক্ষেত্রে: তাপমাত্রা বাড়লে সান্দ্রতা কমে। গ্যাসের ক্ষেত্রে: তাপমাত্রা বাড়লে সান্দ্রতা বাড়ে।
৫. অধ্যায় বিশ্লেষণ: ভৌতজগত এবং পরিমাপ
এই অধ্যায় থেকে প্রশ্ন আসলে মূলত তিনটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্র থেকে আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
- যন্ত্রের ব্যবহার: যেমন, স্পিডোমিটার (গতি), সিসমোগ্রাফ (ভূমিকম্প), স্ফিগমোম্যানোমিটার (রক্তচাপ), হাইগ্রোমিটার (আর্দ্রতা)।
- বিজ্ঞানী ও আবিষ্কার: কোপার্নিকাস (সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্ব), টলেমি (ভূকেন্দ্রিক তত্ত্ব), কেপলার (গ্রহের উপবৃত্তাকার কক্ষপথ), নিউটন (মহাকর্ষ সূত্র)।
- একক ও রূপান্তর: ১ আলোকবর্ষের মান প্রায় 9.46 × 10¹² কিলোমিটার।
৬. অধ্যায় বিশ্লেষণ: আদর্শ গ্যাস
মৌলিক ধ্রুবক: পরম শূন্য তাপমাত্রা (০ কেলভিন বা -২৭৩° সেলসিয়াস), প্রমাণ চাপ (১ অ্যাটমোস্ফিয়ার)।
সার্বজনীন গ্যাস ধ্রুবক (R): ৮.৩১৪ জুল/মোল/কেলভিন।
শক্তির স্বাধীনতার মাত্রা: একপারমাণবিক গ্যাসের জন্য ৩, দ্বিপারমাণবিক গ্যাসের জন্য ৫, এবং বহুপারমাণবিক গ্যাসের জন্য ৬।
৭. সমাপনী বক্তব্য
বক্তৃতার শেষে, শিক্ষক তাঁর চূড়ান্ত বার্তা তুলে ধরেন এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতার কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
"আমি কিন্তু কথা দিছিলাম... সব চ্যাপ্টার ২১ টা চ্যাপ্টারই পড়াবো... একটা চ্যাপ্টারও বাদ দেই নাই এটা হচ্ছে দায়িত্বশীলতা।"
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তিনি কৃতজ্ঞতা ও সমর্থন প্রত্যাশা করেন এবং ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানিয়ে ক্লাসটি সমাপ্ত করেন।
পদার্থবিজ্ঞানের মূল ধারণা: একটি সহজবোধ্য পাঠ
ভূমিকা
এই নথিটির মূল উদ্দেশ্য হলো মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন অধ্যায়ের মূল সূত্র, নীতি এবং ধারণাগুলোকে সহজ ও স্পষ্ট করে তুলে ধরা। উৎস পাঠ্যের উপর ভিত্তি করে, এই পাঠটি শিক্ষার্থীদের জন্য জটিল বিষয়গুলোকে সহজবোধ্য উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করার জন্য তৈরি করা হয়েছে, যা তাদের প্রস্তুতিকে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।
১. নিউটনীয় বলবিদ্যা (Newtonian Mechanics)
১.১ বল এবং এর মৌলিক প্রকারভেদ
পদার্থবিজ্ঞানে, বল হলো এমন একটি বাহ্যিক কারণ যা কোনো বস্তুর স্থির বা গতিশীল অবস্থার পরিবর্তন করে বা করতে চায়। একক: নিউটন (N), মাত্রা: MLT⁻²। প্রকৃতিতে বিদ্যমান সকল বলকে চারটি মৌলিক বলের অধীনে ব্যাখ্যা করা যায়। [পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ]
| মৌলিক বল | প্রধান বৈশিষ্ট্য |
|---|---|
| মহাকর্ষ বল (Gravitational Force) | এটি সর্বাপেক্ষা দুর্বলতম মৌলিক বল। এর পাল্লা অসীম। গ্রাভিটন কণার পারস্পরিক বিনিময়ের কারণে এই বল কার্যকর হয়। |
| দুর্বল নিউক্লিয় বল (Weak Nuclear Force) | এটি তেজষ্ক্রিয়তার জন্য দায়ী, বিশেষ করে বিটা ক্ষয়ের মতো ঘটনা এই বলের কারণে ঘটে। |
| তড়িৎ চুম্বকীয় বল (Electromagnetic Force) | দুটি আহিত কণার মধ্যে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল। ফোটন কণা বিনিময়ের মাধ্যমে এই বল কাজ করে। |
| সবল নিউক্লিয় বল (Strong Nuclear Force) | এটি মহাবিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বল। এটি নিউক্লিয়নের মধ্যে ক্রিয়া করে নিউক্লিয়াসকে স্থিতিশীল রাখে। |
১.২ ভরবেগ ও বলের ঘাত
ভরবেগ (Momentum): কোনো বস্তুর ভর এবং বেগের গুণফল। সূত্র: p = mv, একক: kg m/s।
বলের ঘাত (Impulse of Force): বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল এবং ক্রিয়াকালের গুণফল। এটি বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের সমান। সূত্র: J = F × t = ∆p।
১.৩ জড়তার ভ্রামক এবং চক্রগতির ব্যাসার্ধ
জড়তার ভ্রামক (Moment of Inertia): ঘূর্ণন গতির পরিবর্তনকে বাধা দেয়। সূত্র: I = mr², একক: kg m²।
চক্রগতির ব্যাসার্ধ (Radius of Gyration): k = √(I/m)।
১.৪ রৈখিক ও কৌণিক গতির সম্পর্ক
| রৈখিক রাশি | কৌণিক রাশি | সম্পর্ক |
|---|---|---|
| সরণ (s) | কৌণিক সরণ (θ) | s = rθ |
| বেগ (v) | কৌণিক বেগ (ω) | v = ωr |
| ত্বরণ (a) | কৌণিক ত্বরণ (α) | a = rα |
| ভর (m) | জড়তার ভ্রামক (I) | I = mr² |
| বল (F) | টর্ক (τ) | τ = r × F = Iα |
২. ভেক্টর (Vector)
স্কেলার রাশি: শুধু মান আছে (কাজ, শক্তি)। ভেক্টর রাশি: মান ও দিক উভয়ই আছে (বল, সরণ, বেগ)।
ডট গুণন এর ফলাফল স্কেলার (কাজ, W = F.r) এবং ক্রস গুণন এর ফলাফল ভেক্টর (টর্ক, τ = r × F)।
গ্রেডিয়েন্ট স্কেলার ক্ষেত্রকে ভেক্টর ক্ষেত্রে, ডাইভার্জেন্স ভেক্টর ক্ষেত্রের প্রসারণ এবং কার্ল ভেক্টর ক্ষেত্রের ঘূর্ণন নির্দেশ করে।
৩. পদার্থের গাঠনিক ধর্ম (Structural Properties of Matter)
পীড়ন (Stress): একক ক্ষেত্রফলের উপর প্রযুক্ত বল (F/A)। বিকৃতি (Strain): বস্তুর একক মাত্রার পরিবর্তন (l/L)।
ইয়ং-এর গুণাঙ্ক (Young's Modulus): পীড়ন ও বিকৃতির অনুপাত। যার ইয়ং-এর গুণাঙ্ক বেশি, তার স্থিতিস্থাপকতা বেশি।
পৃষ্ঠটান (Surface Tension): তরল পৃষ্ঠের টানটান অবস্থা। তাপমাত্রা কমালে বা অজৈব পদার্থ মেশালে এটি বাড়ে।
স্পর্শ কোণ (Angle of Contact): কাঁচ ও পানির স্পর্শ কোণ সূক্ষ্মকোণ, তাই পানি কাঁচকে ভেজায়। কাঁচ ও পারদের স্পর্শ কোণ স্থূলকোণ, তাই পারদ কাঁচকে ভেজায় না।
সান্দ্রতা (Viscosity): প্রবাহীর অভ্যন্তরীণ ঘর্ষণ। তরলের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা বাড়লে সান্দ্রতা কমে, কিন্তু গ্যাসের ক্ষেত্রে বাড়ে।
৪. আদর্শ গ্যাস ও গ্যাসের গতিতত্ত্ব (Ideal Gas & Kinetic Theory of Gases)
পরম শূন্য তাপমাত্রা: 0 K বা -273°C।
RMS বেগ: C_rms = √(3RT/M)।
স্বাধীনতার মাত্রা: এক পারমাণবিক গ্যাসের জন্য ৩, দ্বি-পারমাণবিক এর জন্য ৫, এবং বহু-পারমাণবিক এর জন্য ৬।
৫. ভৌতজগত ও পরিমাপ (Physical World & Measurement)
৫.১ বিভিন্ন পরিমাপক যন্ত্র ও তাদের ব্যবহার
- অ্যামিটার: বিদ্যুৎ প্রবাহ পরিমাপ
- হাইগ্রোমিটার: বায়ুর আর্দ্রতা পরিমাপ
- স্পিডোমিটার: গাড়ির দ্রুতি পরিমাপ
- সিসমোগ্রাফ: ভূমিকম্পের তীব্রতা পরিমাপ
- স্ফিগমোম্যানোমিটার: রক্তচাপ পরিমাপ
- পটেনশিওমিটার: কোষের তড়িৎচালক শক্তি নির্ণয়
৫.২ কয়েকজন বিজ্ঞানী ও তাদের আবিষ্কার
কোপার্নিকাস (সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্ব), কেপলার (গ্রহের গতির সূত্র), নিউটন (মহাকর্ষ সূত্র), টলেমি (ভূকেন্দ্রিক তত্ত্ব)।
উপসংহার
এই নথিতে নিউটনীয় বলবিদ্যা থেকে শুরু করে ভেক্টর, পদার্থের গাঠনিক ধর্ম, আদর্শ গ্যাস এবং পরিমাপের জগৎ পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক ধারণাগুলো সহজভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই বিষয়গুলো সঠিকভাবে আয়ত্ত করতে পারলে পদার্থবিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের কাছে অনেক বেশি আনন্দদায়ক ও সহজবোধ্য হয়ে উঠবে এবং তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়ক হবে।
বলের ঘাত সিমুলেশন
দেয়ালে একটি বলের ধাক্কার সিমুলেশন